শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ভান্ডারিয়া প্রতিনিধি।।
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় এক ভাইকে বাবার বসতবাড়ী ও তার সম্পত্তি থেকে উৎখাতের অভিযোগ উঠেছে আপন ৪ ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এ কারণে ভুক্তভোগি খান ইকবল হোসেন স্ত্রী ও তার দুই সন্তান নিয়ে এক প্রকার পথে বসেছেন। ফলে তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খান ইকবল হোসেন উপজেলার ১ নম্বর ভিটাবাড়ীয়া ইউনিয়নের উত্তর শিয়ালকাঠী গ্রামের মৃত খান মোশারেফ হোসেনের ছেলে।
ভাইদের অত্যাচার ও বাবার রেখে যাওয়া পৈত্রিক সম্পত্তি- বসতভিটার ন্যয্য হিসাব বুজিয়া পাইবার জন্য সংবাদিক ও প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে শুক্রবার (১৩ আগস্ট) স্থানীয় সাংবাদিক বৃন্দ ও ভান্ডারিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি/ সম্পাদকের বরাবরে ইকবল খান একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে তিনি জানান, তার দাদা আলহাজ আতাহার আলী খান ১৯৬৪ সালের ২১ জানুয়ারী মহান কাজের উদ্দেশ্যে ১১.৩৫ একর সম্পত্তি ইসলামী ফাউন্ডেশনে ওয়াক্ফ এস্টেটে রেজিষ্ট্রি মূলে ওয়াক্ফ মোতওয়াল্লী হিসেবে দান করেন। যা আলহাজ আতাহার আলী খান এস্টেট-পিরোজপুর নামে দলিল পত্রে রয়েছে। যার ইসি নং-২০২৯০ । ওই দানকৃত সম্পত্তির মধ্যে তার বসত বাড়ী ও অন্যান্য জমিও রয়েছে। তার বাবা খান মোশারেফ হোসেনের মৃত্যুর পরে তার অপর চাচা খান গোলাম হোসেন গত ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ওই এস্টেটের সর্বশেষ মোতওয়াল্লী ছিলেন এবং গত ১৮ সালে তিনিও মারা যান। কিন্তু ওই এস্টেটের জমি আজও স্থানীয় ভুমি সংক্রান্ত অফিস আদালতের নথি পত্রে বাবা দাদার নামেই রের্কড রয়েছে। সেই সুবাদে তার ৪ ভাই ফিরোজ খান,আজমল খান, কামাল খান, পারভেজ খান, বোন ফেরদৌসি ও জমির অন্য ওয়ারিশরা হিসেবে কেউ কেউ অবৈধ ভাবে বিক্রি সহ ভোগ করে আসছে এবং তার প্রভাবশালী ৪ ভাই জোড় খাটিয়ে তার সমস্ত বাড়ি ও সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। আপরদিকে তাকে (ইকবল) বসতবাড়ী ও অন্যান্য জমিতে প্রবেশ করতে বাধাঁ দিচ্ছে। ফলে পরিবার নিয়ে ওই এস্টেটে তার মাথা খোঁজার ঠাইটুকুও তারা কেড়ে নিচ্ছে।
তিনি আরো জানান, বাবার মৃত্যুর পূর্বে হজে যাওয়ার সময় বড় ভাই ফিরোজ খানের কাছে নগত ৩ লাখ টাকা রেখে যান এবং সেই টাকার কোন অংশ তাকে দেয়নি। তাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে তার অংশের সাড়ে ৪ কাঠা জমি কৌশলে বিক্রি করিয়া নিয়ে যায়। তার অপর ভাই কামাল খান মায়ের মৃত্যুর পরে তাকে ( ইকবল) দেয়া আড়াই বড়ি স্বর্নালঙ্কার হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও ইকবাল খান জমিজমা বিক্রি পর হকসভা সংক্রান্ত ৮০ হাজার টাকা রাখেন কামাল খানের কাছে ও বিগত দিনে বন্ধু পরিষদে তার নামের একটি সমিতির লেনদেনেরও দ্বায়িত্ব ভাইকে দিলে তিনি তার হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ওই সমিতিতে তার স্ত্রীর নাম স্থাপন করে।
এছাড়াও ইতিপূর্বে পৈত্রিক সম্পত্তিতে তার রোপনকৃত বনজী গাছ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় কামাল খান। তাকে দেখে বড় ভাই ফিরোজ ৩৭ হাজার ৫ শত টাকার বনজী গাছ বিক্রি করে নিয়ে যান, তা থেকে তাকে কানা কড়িও দেয়নি। তিনি এসব কর্মকান্ডের ঢাকা বসে প্রতিবাদ করলে ভাইয়েরা এক হয়ে তাকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে অজ্ঞাত ৪ জন ব্যক্তি দিয়ে হাত পা বেধে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মম নির্যাতন করে। তখন ভাড়াটীয়া বাসাবাড়ীর মালিকের সাহায্যে পুলিশ এসে স্ত্রীকে উদ্ধার করে। সম্প্রতি করোনার লকডাউনে তার চাকুরী চলে গেলে বর্তমানে তিনি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়াগ্রামের বাড়ী চলে আসেন স্ত্রী, সন্তান নিয়ে। সেই থেকে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই তিনি পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে ৫ টি বাশঁ ১ হাজার টাকায় বিক্রি করে ছিলেন। তাতে তার অপন ভাইয়েরা স্থানীয় মৃত হাসেম খানের ছেলে সন্ত্রাসী খলিলকে দিয়ে তার নামে ভান্ডারিয়া থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বহু হয়রানি করেছে। উক্ত খলিলসহ আরো ৬ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি আমার পরিবারকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার বসত ঘরের দরজা ভেঙে হামলাও করে বলে অভিযোগ খান ইকবল হোসেনের।
খান ইকবল হোসেন বলেন, তার বাবার ক্রয়কৃত ২৮ কাঠা সম্পতি ছিলো। তা থেকে তিনি মাত্র ১ কাঠা জমি বিক্রি করেছেন। কিন্তু তার আপন ৪ ভাইয়েরা এক হয়ে তার বাবার বসতভিটা ও তাদের বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে উৎখাতে মেতে উঠেছে। ওই জমিজমা নিয়ে পরিবারিক ভাবে ভাইদের সাথে শালিস মিমাংসা হলেও তারা তা মানেনা আর স্থানীয় কোন শালিশ মিমাংসায়ও বসছে না। সম্প্রতি আমাকে ও আমার পরিবারকে লোকজন দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করবে বলে ভয়ভীতি সহ প্রানে নাশের হুমকি দিয়ে আসছে।
এ ঘটনায় আমি সম্প্রতি ভান্ডারিয়া থানায় তাদের নামে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছি। সুত্র জানায়, আলহাজ আতাহার আলী খান এস্টেটের ১১.৩৫ একর সম্পত্তির অর্ধেকেরও বেশী এস্টেটের আওলাদরা অবৈধ ভাবে বিক্রি করে ফেলেছে। আর যে সম্পত্তিতে গাছ পালা রয়েছে তাও বিক্রি করে দিচ্ছে দখলদারা। এ থেকে ওয়াকফ এস্টেট এর সকল সরকারি নিয়ম অমান্য কারা হয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।
ইকবল হোসেনের স্ত্রী ফারহানা জানান, আমার স্বামী অসহায় থাকায় তার লুভি ভাইয়েরা আমার ওপর বেশ কয়েক বার নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। সেই হামলার পরে আমি দুরারোগ্য ক্যান্সার ও কিডনি রোগে আক্রান্ত। তার সন্তানদের মাথা খোঁজার জমি টুকুও তারা কেড়ে নিতে চায়। ওই ৪ ভাইয়ের অসৎ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে তারা আমার স্বামিকে দিয়ে আমাকে তালাক দেয়ার বহু চেষ্টা চালিয়েছে। মামলা দিয়ে হয়রানি সহ তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে খলিলের মুঠোফোনে বারবার কল দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কামাল খানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, যে জমি পাবে তার বেশি বিক্রি করেছে ইকবল। সে কোন জমি পাবে না বলে জানান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন অফিসের কর্মকর্তা ও ভান্ডারিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: তৌহিদুল ইসলামের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, ওয়াকফ এস্টেট প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোন সম্পত্তি বিক্রি করার অধিকার কারো নেই। কেউ যদি বিক্রি করে থাকে তবে তা টিকবে না। যে কোন সময় ওই সম্পদ ওয়াকফ এস্টেট প্রশাসন আদালতের নির্দেশে উদ্ধার করবে । এতে এস্টেট বিক্রি হোতাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।